বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসরত রতন মিয়া, এক সাধারণ কৃষক। তার দিন শুরু হয় সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথেই। জীবিকার তাগিদে দিনমজুরের কাজ করে, পরিশ্রমে মাঠে ঘাম ঝরায়, কিন্তু অভাব আর দারিদ্র্য কখনোই তার পিছু ছাড়ে না। প্রতিদিন রতনের দিনগুলো কাটে অন্যের জমিতে কাজ করে। জমির মালিকদের ফসল ফলানোর কাজ শেষ হলেই তার শ্রমের বিনিময়ে সামান্য কিছু পায়, কিন্তু সেই আয়ে কখনোই তার পরিবারের অভাব মেটে না।
রতন মিয়া পরিবারে এক স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার এই সংগ্রামী জীবন পার করে। তার স্ত্রী মলিনা সবসময় তাকে সান্ত্বনা দেয়, “সুখ একদিন আসবেই। তুমি চেষ্টার কমতি রেখো না।” কিন্তু বছর ঘুরলেও তাদের ঘরে সমৃদ্ধি আসে না, আর দিন দিন আরও গভীর অভাবের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে।
রতনের কাছে জমি নেই, নেই কোনো পুঁজি, আছে কেবল পরিশ্রম আর এক বুক আশা। প্রতিদিনের খাবারের যোগান দিতে গিয়ে সে হিমশিম খায়। তবুও, রতন হাল ছাড়ে না, সে দিনমজুরির কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু তার কঠিন পরিশ্রম আর চেষ্টার পরেও ঘরে কোনো স্বস্তি আসে না। বরং ধনী জমিদাররা তার পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে। তারা রতনকে সামান্য পারিশ্রমিক দিয়েই তার দিনরাতের ঘাম শুকিয়ে নেয়।
কিন্তু রতন হাল ছাড়ার মানুষ নয়। সে স্বপ্ন দেখে, তার নিজের একটা জমি হবে, যেখানে সে নিজে ফসল ফলাবে। এই স্বপ্নই তাকে বাঁচিয়ে রাখে। একদিন, জমিদারের কাছে কাজ চাইতে গেলে, জমিদার তাকে অপমান করে বলে, “তুই সারাজীবন গরিবই থাকবি। তোকে দিয়ে কিছু হবে না।”
এই কথাগুলো রতনের মনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সে ঠিক করে, আর অন্যের জমিতে কাজ করবে না। নিজের আঙিনায় ছোট্ট একটা সবজি বাগান করে। প্রথমে সেই বাগান থেকে সামান্য লাভ হলেও, ধীরে ধীরে তার পরিশ্রম ফল দিতে শুরু করে। গ্রামের মানুষ তার এই পরিশ্রম দেখে উৎসাহিত হয় এবং তাকে সাহায্য করে।
রতনের এই ছোট্ট সবজি বাগান তার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বাগানের ফসল থেকে তার সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। যদিও এখনও সে ধনী নয়, কিন্তু নিজের হাতে গড়া স্বপ্নকে সত্যি করতে পেরেছে। সে এখন বুঝতে পারে যে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো নিজের ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম।
রতনের গল্প কেবল একজন গরীব কৃষকের সংগ্রামের কাহিনী নয়, এটি সেই সমস্ত মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা যারা জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে চায়।
0 Comments