নতুন গল্প ও স্কুলের জীবন

 

https://skstorymedia.blogspot.com/

শিক্ষা জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো স্কুল। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে স্কুল জীবনের সাথে জড়িত ছিলাম বা আছি। ছোট্টবেলায় স্কুলের প্রথম দিনটা আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হয়তো আমরা তখন বুঝতে পারিনি, কিন্তু আজ সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে যেন একরাশ স্মৃতি এসে ভিড় করে। স্কুলের দিনগুলো যেমন ছিল শিখন, তেমনই ছিল খেলা, হাসি, কাঁদা এবং বন্ধুত্বের গল্পে ভরা। তবে স্কুল জীবন শুধু পড়াশোনা নয়, এখানে অনেক নতুন গল্প তৈরি হয়, অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়, যা আজীবন আমাদের স্মৃতিতে থেকে যায়।

এই গল্পটি আমার ছোট্ট স্কুল জীবনের কিছু অব্যক্ত স্মৃতির ছোঁয়া। আমার নাম রাহাত। আমি তখন ক্লাস সিক্সের ছাত্র। নতুন স্কুল, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ – সব কিছুই নতুন। তবে সবচেয়ে বেশি ভীতিকর ছিল প্রথম দিন। সবার মধ্যে এক অদ্ভুত উৎকণ্ঠা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কথা মেনে চলতে হবে, সহপাঠীদের সাথে মিশতে হবে – এই চিন্তাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল।

প্রথম দিন যখন স্কুলের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকলাম, তখন মনে হচ্ছিল, যেন আমি কোনো নতুন দুনিয়ায় পা রেখেছি। চারপাশে অনেক অপরিচিত মুখ। আমি ধীরে ধীরে ক্লাসরুমের দিকে পা বাড়ালাম। ক্লাসরুমে ঢুকে দেখি, সবাই খুব ব্যস্ত। কেউ একজন নতুন গল্প শুরু করতে যাচ্ছে। গল্পটা ছিল স্কুলের ভূত নিয়ে। নতুন স্কুলে ভূতের গল্প! বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। আমি ধীরে ধীরে পিছনের বেঞ্চে বসলাম। তখন হঠাৎ একজন মেয়ে, যার নাম ছিল নিশা, আমার পাশে এসে বসল। নিশা ছিল খুব মিষ্টি এবং শান্ত স্বভাবের মেয়ে। ও আমাকে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি ভূতের গল্পে বিশ্বাস করো?"

আমি একটু দ্বিধায় পড়ে বললাম, "না, আমি ভূতের গল্পে বিশ্বাস করি না, তবে শুনতে ভালো লাগে।"
নিশা হেসে বলল, "তুমি কি জানো, আমাদের এই স্কুলে নাকি একটা ভূত আছে?"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "সত্যি?"

নিশা বলল, "হ্যাঁ, এই স্কুলের পুরোনো দালানে একটা ভূত থাকে। সে নাকি রাতের বেলা ক্লাসরুমের জানালা খুলে ঘোরাঘুরি করে। অনেকেই নাকি তাকে দেখেছে!"

আমি একটু ভয় পেলেও মনে করলাম, নিশা হয়তো মজা করছে। কিন্তু এই গল্পের পর থেকেই আমি খুব কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। স্কুলের পুরোনো দালানটা দেখে আমার মন কেমন যেন হতে লাগল। মনে হতে লাগল, সত্যিই কি সেখানে কিছু আছে?

পরবর্তী কয়েকদিন ধরে, আমি আর নিশা প্রতিদিন ক্লাসের পর পুরোনো দালানের কাছে গিয়ে দাঁড়াতাম। আমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করছিল। একদিন আমরা ঠিক করলাম, রাতে আমরা স্কুলে এসে সেই পুরোনো দালানে যাব। আমাদের সাথে আরো দু’জন বন্ধু জুড়ে গেল – তানিম আর রাফি। আমরা চারজন মিলে পরিকল্পনা করলাম, স্কুলের পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পুরোনো দালানের দিকে যাব।

রাতের বেলা, আমরা সবাই মিলে সাহস করে স্কুলে ঢুকে গেলাম। পুরো স্কুল তখন যেন ভূতের বাড়ি! কোথাও কোনো আলো নেই, শুধু চারপাশের গাছের পাতার ঝিরঝির শব্দ। আমরা খুব আস্তে আস্তে এগোতে থাকলাম। পুরোনো দালানের সামনে পৌঁছে দেখলাম, দরজাটা একটু খোলা। নিশা সাহস করে প্রথমে ঢুকল, আমরা সবাই পেছন পেছন।

দালানের ভেতর ঢুকে আমাদের সবার মনে ভয় কাজ করছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলছিলাম না। হঠাৎ আমরা একটা শব্দ শুনতে পেলাম, যেন কারও পায়ের আওয়াজ! আমাদের সবার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তানিম বলল, "এটা কি ভূত?"

আমরা ধীরে ধীরে সেই আওয়াজের দিকে এগোতে থাকলাম। তখনই দেখি, একটা সাদা ছায়া ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। নিশা চিৎকার করে বলল, "ভূত!" আমরা সবাই চিৎকার করে দৌড়াতে লাগলাম।

পরে আমরা বুঝতে পারলাম, সেই সাদা ছায়াটা আসলে একজন বৃদ্ধ দারোয়ান, যিনি রাতে স্কুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। সে আমাদের দেখে কিছুক্ষণ হেসে বলল, "তোমরা ভূত খুঁজতে এসেছিলে? এই দালানে কোনো ভূত নেই। তবে তোমাদের সাহসের প্রশংসা করতেই হবে।"

আমরা তখন লজ্জায় মুখ নিচু করলাম, কিন্তু একসাথে সবাই হেসে উঠলাম।

স্কুল জীবনের এই মজার স্মৃতি আজও আমার মনে খুব স্পষ্ট। নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ, আর সেই ভূতের গল্প আমাদের জীবনের এক অমূল্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। স্কুল শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, এটি আমাদের জীবনের নতুন গল্পের সূচনা। আজ যখন ফিরে তাকাই, দেখি, সেইসব দিনগুলো ছিল জীবনের অন্যতম সুন্দর সময়।

স্কুল আমাদের অনেক কিছু শেখায় – বন্ধুত্ব, সম্মান, সাহস, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নতুন কিছু জানার কৌতূহল। প্রতিটি স্কুলই আমাদের জীবনের এক একটি অধ্যায়ের গল্প তৈরি করে, যেগুলো আমরা সারা জীবন মনে রাখি। এবং এই গল্পগুলোই আমাদের জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

Post a Comment

0 Comments