একটি ছোট্ট গ্রাম, নাম তার ফুলপুর। গ্রামের মানুষগুলো একদম সরল এবং শান্তিপ্রিয়। চারিদিকে সবুজে ঘেরা, ছোট্ট একটি নদী বয়ে গেছে পাশ দিয়ে। ফুলপুরের মানুষরা বেশিরভাগই কৃষক, দিনশেষে ক্লান্তি ঝেড়ে বাড়ি ফিরে যায়। এ গ্রামে যেন কিছুই ঘটতে পারে না—সবকিছুই যেন নিখুঁত।
কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। প্রতিদিন গ্রামের কোনো না কোনো বাড়ি থেকে ছোটখাটো জিনিসপত্র অদৃশ্য হতে থাকে। কেউ তাদের গরুর দড়ি হারাচ্ছে, কারো লণ্ঠন, আবার কারো রান্নার পাত্র। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, হয়তো কেউ ভুল করে অন্যের বাড়িতে নিয়ে গেছে। কিন্তু এমন ঘটনা যখন একের পর এক বাড়তে থাকল, গ্রামের সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ল।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ পন্ডিত মশাই, যাকে সবাই খুব সম্মান করে, একদিন বললেন, "এত সহজে ভয় পেয়ে লাভ নেই। আমাদের ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে, হয়তো কোনো দুর্বৃত্ত আমাদের গ্রামের চারপাশে ঘুরছে।"
এখন প্রতিদিন রাতে গ্রামের কয়েকজন যুবক পালা করে পাহারা দিতে শুরু করল। তবু জিনিসপত্র হারানোর রহস্য ভেদ হচ্ছিল না। কেউ বুঝতে পারছিল না কীভাবে এই চুরি হচ্ছিল, বা কে করছিল। একেক রাতে একেকজন পাহারা দিলেও, শেষমেশ সকালে দেখা যেত কিছু না কিছু হারিয়েই গেছে।
কয়েকদিন পর, এক পূর্ণিমার রাতে, ভোরবেলা আবির নামে এক যুবক রহস্যের কিছুটা আঁচ পেল। সে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ছিল এবং দেখল গ্রাম থেকে একটু দূরে একটি ছোট্ট আলো জ্বলছে। সে ভাবল, হয়তো চোর ওখানেই লুকিয়ে আছে। সে পা টিপে টিপে সেই আলোর দিকে এগিয়ে গেল। কাছে গিয়ে দেখে, এক বুড়ো মুচি বসে আছে। তার চারপাশে গ্রাম থেকে চুরি যাওয়া জিনিসপত্র সাজানো।
আবির বিস্ময়ে হতবাক। বুড়োকে জিজ্ঞেস করতেই সে মুচকি হেসে বলল, "বাবা, আমি চুরি করিনি। এই গ্রামে বহুদিন আগে থাকতাম, তবে তারপর থেকেই একাকী হয়েছি। ভাবলাম এই সব জিনিস নিয়ে অন্তত কিছুটা মানুষের মাঝে থাকতে পারব।"
আবির তার কথা শুনে কিছুটা মায়া অনুভব করল। সে ফিরে গিয়ে সবাইকে সব জানাল। গ্রামের মানুষজন প্রথমে রেগে গেলেও পরে মুচির একাকীত্ব বুঝতে পারল। তারা সিদ্ধান্ত নিল তাকে পুনরায় গ্রামে ফিরিয়ে আনার। সেই বৃদ্ধ মুচি আবার গ্রামের মানুষদের সাথে বাস করতে শুরু করল, আর তার পর থেকে গ্রামের কোনোকিছু আর অদৃশ্য হয়নি।
এভাবেই, ফুলপুরের মানুষ একটি রহস্যের সমাধান করে নিজেদের মানবিকতার পরিচয় দিল।
0 Comments